islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube


কুরআন সুন্নাহর আলোকে মধ্যমপন্থা


11598
পাঠ সংক্ষেপ
মুসলিম উম্মত মধ্যমপন্থী উম্মত। অতি মাত্রায় কঠোরতা অথবা অতি মাত্রায় ঢিলেমী থেকে বিমুক্ত উম্মত। কেননা অতি মাত্রায় কঠোরতা ধর্মকর্ম পালনে মানুষকে নিস্পৃহ করে ফেলে। আবার অতি মাত্রায় ঢিলেঢালা ভাব মানুষকে করে দেয় অকর্মন্য, অলস। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে দীন দিয়েছেন, যে আদর্শ দিয়েছেন তা হলো মধ্যমপন্থী দীন ও আদর্শ।

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ تَفَرَّدَ بِالرُّبُوْبِيَّةِ وَالْأُلُوْهِيَّةِ كَمَالاً، وَاخْتَصَّ بِالْأَسْمَاءِ الْحُسْنَى وَالصِّفَاتِ الْعُلْيَا جَلَالاً، أَحْمَدُهُ تَعَالَى وَأَشْكُرُهُ عَلَى سَوَابِغِ نِعَمِهِ إِفْضَالاً، وَجَزِيْلِ عَطَائِهِ نَوَالاً، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَمَرَ بِالتَّمَسُّكِ بِالْإِسْلَامِ وَسْطِيَّةً وَاعْتِدَالاً، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ الْمَبْعُوْثُ بِأَوْسَطِ شَرِيْعَةٍ وَأَكْمَلِهَا خِلَالاً، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْراً كَثِيْراً، أَمَّا بَعْدُ :

মুহতারাম হাযেরীন! মুসলিম উম্মত মধ্যমপন্থী উম্মত। অতি মাত্রায় কঠোরতা অথবা অতি মাত্রায় ঢিলেমী থেকে বিমুক্ত উম্মত। কেননা অতি মাত্রায় কঠোরতা ধর্মকর্ম পালনে মানুষকে নিস্পৃহ করে ফেলে। আবার অতি মাত্রায় ঢিলেঢালা ভাব মানুষকে করে দেয় অকর্মন্য, অলস। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে দীন দিয়েছেন, যে আদর্শ দিয়েছেন তা হলো মধ্যমপন্থী দীন ও আদর্শ। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

{وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا.}

‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর ’ (সূরা আল বাকারা:১৪৩)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর রহ. বলেন: এ মধ্যমপন্থাই উম্মতে মুহাম্মাদীকে বিশ্ববাসীর ওপর সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা দান করেছে। কেননা অধিক কঠোর অথবা অতি সহজ কোনো বিষয় যেহেতু ভারসাম্যরহিত তাই এ ধরনের কোনো বিষয় বিশ্বময় গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না। মধ্যমপন্থাই হচ্ছে উত্তম পন্থা, যা মানুষকে কাছে টানতে পারে অতিসহজে। তাই বিশ্বব্যাপী ওহী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আদর্শের প্রচার এবং বিশ্ববাসীর ওপর সাক্ষী হিসেবে দাঁড়ানোর যোগ্যতা একমাত্র মুসলিম উম্মাহরই রয়েছে।

আদর্শিক ভারসাম্যতা, নীতিনৈতিকতা প্রভৃতির নিরিখে মুসলিম উম্মাহ সর্বোত্তম উম্মাহ। তাই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের দায়িত্ব তাঁদের ঘাড়েই অর্পিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :

{كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آَمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ .}

‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (সূরা আলে ইমরান:১১০)

প্রিয় মুসল্লিয়ানে কিরাম! দীন প্রচারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনই ছিল নবী-রাসূলগণের আদর্শ। আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন

(إِنَّ الْدِّيْنَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الْدِّيْنَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ)

‘দীন হলো সহজ। দীনকে কেউ কঠিন করলে দীন তাকে পরাহত না করে পারে না’ (বুখারী)

ইসলামে মধ্যমপন্থা একটি সর্বব্যাপী ধারণা। আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তাধারা, ইবাদত-বন্দেগী, মুআমালাত মুআশারাত, আইন ও বিধান, ভাব ও অনুভূতি, আত্মা ও শরীর, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়াবলী, বুদ্ধি ও আবেগ, আকল ও কালব, আদর্শ ও বাস্তবতা এসব কিছুই মধ্যমপন্থার আওতাধীন।

ইসলামের আলোকে মানবজীবনের সকল কিছুই একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। ইবাদত-বন্দেগী, দু‘আ-প্রার্থনা, জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর জন্য। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এর চেয়ে উন্নততর বিশ্বাস অন্য আরেকটি হতে পারে না। অন্যান্য ধর্মে নিরঙ্কুশ ও নির্ভেজাল একত্ববাদের ধারণা না থাকায় তার অনুসারীরা বিশ্বাসগত নানা জটিলতায় ভোগেন। কেননা তা আল্লাহর সৃষ্ট মহাজাগতিক রীতি ও প্রকৃতিবিরোধী এবং তা মিথ্যা ও বানোয়াট কিছু বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যে কারণে তা কখনো বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি রচনা করতে পারে না। ইবাদত-বন্দেগী, জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর এই ঘোষণাই ভারসাম্যপূর্ণ আকীদার ঘোষণা যুক্তিসঙ্গত বিশ্বাসের ঘোষণা। ইরশাদ হয়েছে

{قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ}

‘বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। ‘তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম’ (সূরা আল আনআম:১৬২-১৬৩)

বিচার-ফয়সালা ও শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে ও আল্লাহ তাআলা ন্যায় ও ইনসাফের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর ন্যায় ও ইনসাফই হলো মধ্যমপন্থা। ইরশাদ হয়েছে :

{إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا}

‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানাতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ ( সূরা আন-নিসা:৫৮)

সর্বাবস্থায় ন্যায় ও ইনসাফ অনুসরণের নির্দেশ, এমনকি শত্রুর সাথেও ইনসাফের নির্দেশ মধ্যমপন্থার চূড়ান্ত সার। ইরশাদ হয়েছে :

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآَنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ}

‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে স্যাদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্র“তা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আল মায়েদা:৮)

আল্লাহকে ডাকা ও দু‘আ-প্রার্থনার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনও এ ক্ষেত্রের একটি দলীল। ইরশাদ হয়েছে :

{قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا.}

‘বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর’ (সূরা আল ইসরা:১১০)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে অর্থসম্পদ, নিয়ামত-সামগ্রী দিয়েছেন তা পরকালীন জীবন সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যয় করা এবং পাশাপাশি দুনিয়ার হিস্সা একেবারে ভুলে না যাওয়ার নির্দেশও মধ্যমপন্থার একটি অতি উজ্জ্বল উদাহরণ। ইরশাদ হয়েছে

{وَابْتَغِ فِيمَا آَتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآَخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ .}

‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’ (সূরা আল কাসাস:৭৭)

অর্থ ব্যয় ও দান খয়রাতের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনও এ পর্যায়ের একটি উদাহরণ। ইরশাদ হয়েছে :

{وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا}

‘আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে’ (সূরা আল ইসরা:২৯)

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

(أَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا امْرَأَةٌ، قَالَ: مَنْ هَذِهِ؟ قَالَتْ: فُلَانَةُ تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا، قَالَ: مَهْ عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ، فَوَاللَّهِ لَا يَمَلُّ اللَّهُ حَتَّى تَمَلُّوا، وَكَانَ أَحَبَّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ)

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়শা রাযি. এর কে প্রবেশ করলেন। তাঁর কাছে তখন এক মহিলা বসা ছিলেন। তিনি বললে, ‘এ কে’? আয়শা রাযি. বললেন, ‘অমুক মহিলা। তিনি কত নামায পড়েন তাই উল্লেখ করছেন’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ক্ষ্যান্ত হও! যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে তাই করো। আল্লাহর কসম! আল্লাহ বিরক্ত হন না, যতণ না তোমরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়। আর আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় দীন হলো তাই আমলকারী যা সর্বদা করে’ (বুখারী)

তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উস্কো খুস্কো চুলে একব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। দূর থেকে তার গুনগুন আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল, তবে সে কী বলছিল তা বুঝা যাচ্ছিল না। পরিশেষে সে যখন নিকবর্তী হলো, তখন ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে’। লোকটি বলল,‘আমার ওপর কি অতিরিক্ত নামায আছে’? তিনি বললেন, ‘না, তবে যদি তুমি নফল আদায় কর’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আর রমযানের রোযা’। লোকটি বলল, ‘আমার ওপর কি এর বাইরে আরো রোযা আছে’? তিনি বললেন,‘না, তবে যদি তুমি নফল হিসেবে কিছু আদায় কর’। বর্ণনাকারী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছে যাকাতের কথা উল্লেখ করলেন। লোকটি বলল, ‘আমার ওপর এ ব্যাপারে আরো কিছু দায়িত্ব আছে’? তিনি বললেন, ‘না, তবে যদি তুমি নফলভাবে কিছু আদায় কর’। এরপর লোকটি এই বলে চলে গেল যে, আল্লাহর কসম! আমি এর থেকে বেশিও করব না, কমও করব না’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘লোকটি সফলকাম যদি সে সত্যবাদী হয়’ (বুখারী)

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আকাবা দিবসের সকাল বেলায় বললেন, ‘আমার জন্য কঙ্কর কুড়াও! আমি তার জন্য বুটের দানার ন্যায় কঙ্কর কুড়ালাম। যখন আমি কঙ্করগুলো তাঁর হাতে রাখলাম, তিনি বললেন, ‘এ ধরনের কঙ্করই। আর তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচো। নিশ্চয় যারা তোমাদের পূর্বে ছিল তারা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে’ (আহমদ)।

প্রিয় মুসল্লিয়ান! আকীদা, অনুসরণ ও আনুগত্যে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নীতি হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে চলা। বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য থেকে দূরে থেকে ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অনুসরণ করে চলা কেননা বাড়াবাড়ি বর্জনের মধ্যেই রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ এবং আল্লাহর নির্দেশের যথার্থ বাস্তবায়ন। ইরশাদ হয়েছে :

{يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ انْتَهُوا خَيْرًا لَكُمْ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا.}

‘হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর ওপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর প থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসমূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আন-নিসা:১৭১)

আনাস ইবনে মালিক রাযি. বলেন, ‘তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর স্ত্রীদের কাছে এল। তাদেরকে যখন এ ব্যাপারে অবগত করানো হলো, তখন তারা যেন তা কম বলে ভাবল। তারা বলল, ‘আমরা কোথায় আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথায়! আল্লাহ তো তাঁর সামনের ও পিছনের সকল গুনাহই মাফ করে দিয়েছেন’। তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘আমি আজীবন রাতভর নামায পড়ব’। অন্যজন বলল, ‘আমি জীবনভর রোযা রাখব। কখনো রোযা ভাঙ্গব না’। তৃতীয়জন বলল,‘ আমি নারী সংসর্গ থেকে দূরে থাকব। কখনো বিয়ে করব না’।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নিকট এলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা এরূপ এরূপ কথা বলেছ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীরু, অধিক তাকওয়াধারী। তবে আমি রোযা রাখি ও রোযা ভঙ্গ করি। নামায পড়ি ও নিদ্রা গমন করি এবং নারীকে বিবাহ করি। তাই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (বুখারী)

সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য থেকে দূরে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের আকার-প্রকৃতি সম্পর্কে আইম্মায়ে কেরাম ও উলামা মাশায়েখদের কিছু বক্তব্য এখানে তুলে ধরছি :-

ইমাম ইবনে জারীর আত-তাবারী রহ. বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে মধ্যম উম্মত বলার কারণ হলো, দীনের ক্ষেত্রে তারা মধ্যমপন্থী। না তারা বাড়াবাড়িকারীদের দলভুক্ত- যেমনটি করেছে খৃস্টানজাতি তারা ভীতিপ্রদর্শনের বেলায় বাড়াবাড়ি করেছে, ঈসা আলাহিইস্ সালামের ব্যাপারে তাদের বক্তব্যেও বাড়াবাড়ি করেছে। আর না তারা অবহেলা ও উপোকারীদের দলভুক্ত-যেমনটি করেছে ইয়াহুদী সম্প্রদায় কেননা তারা আল্লাহর কিতাবে পরিবর্তন এনেছে, তাদের নবীদেরকে হত্যা করেছে, তাদের রবের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, উপরন্তু তাঁর সাথে তারা কুফরী করেছে। এর বিপরীতে উম্মতে মুহাম্মাদী হলো ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থী। এ কারণেই আল্লাহ তাআলাসতাদেরকে মধ্যম উম্মত বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর আল্লাহর কাছে মধ্যম বিষয়ই হলো সর্বোত্তম বিষয়।

ইমাম শাতেবী রাহ. বলেন, ‘যদি গোটা শরীয়তের প্রতি নজর দিয়ে ভেবে দেখ তাহলে দেখতে পাবে, শরীয়তের পুরোটাই মধ্যমপন্থার বাহক। যদি এর কোনো প্রান্ত একটু হেলে পড়েছে বলে পরিলতি হয়, তবে মনে করতে হবে, অন্য কোনো প্রান্তের বর্তমান বাস্তবতা অথবা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন বাস্তবতার সাথে ভারসাম্য রার খাতিরেই তা করা হয়েছে। অতঃপর কঠোরতার দিক- যা সাধারণত ধমক ও ভীতি প্রদর্শন বিষয়ক হয়ে থাকে- তা ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আনীত, দীনের ব্যাপারে শিথিলতা যার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে। পান্তরে সহজ করার দিক- যা সাধারণত আশাবর্ধক ও হালকাকরণ বিষয়ক হয়ে থাকে- তা ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আনীত, দীনের ব্যাপারে অতি মাত্রায় কঠোরতা যার ওপর প্রাধান্য পেয়েছে। এই দুই প্রান্তকে বাদ দিয়ে দীনের প্রতি তাকালে মধ্যমপন্থা অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে দেখা দেবে। ভারসাম্য অত্যন্ত পরিষ্কার আকারে পরিলতি হবে। আর এটাই হলো মূল, যার দিকে ফিরে যাওয়া হয়, এটাই হলো ঘাটি, যার আশ্রয়ে আসা হয়।

মুহতারাম হাযেরীন! মধ্যমপন্থার বিপরীত কিছু কর্ম ও অবস্থান রয়েছে। এগুলোর প্রতি আলোকপাত করা জরুরী বলে মনে করি। এসব কর্ম ও অবস্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, অযাচিত বাড়াবাড়ি, বিদআত, সন্ত্রাস, অযাচিতভাবে কাউকে কাফির বলা, অযাচিত শিথিলতা করা ইত্যাদি।

যারা এসব কর্মে জড়িত তারা সাধারণত কুরআনের অস্পষ্ট অংশের আশ্রয় নিয়ে থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন

(إِنَّهُ سَيَأْتِيْ أُنَاسٌ يَأْخُذُوْنَكُمْ بِشُبُهَاتِ الْقُرْآنِ، فَخُذُوَهُمْ بِالسُّنَنِ ؛ فَإِنََّ أَصْحَابَ السُّنَنِ أَعْلَمُ بِكِتَابِ اللَّهِ‘)

নিশ্চয় এমন কিছু মানুষ আসবে যারা কুরআনের শুবুহাত তথা অস্পষ্ট অংশগুলো দিয়ে তোমাদের মোকাবিলা করবে তোমরা তাদেরকে সুন্নত দিয়ে মোকাবিলা কর। কেননা সুন্নত-ওয়ালারাই আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী’ (বাগাবী: শারহুস সুন্নাহ)।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন। শরীয়তের আদেশ-নিষেধ তাযীম ও সম্মান করার বিপরীত কয়েকটি বিষয় রয়েছে। বিষয়গুলো হলো:

এক.সুযোগ সন্ধান, যা পূর্ণাঙ্গরূপে শরীয়তের বিধান আমলে আনা থেকে মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়।

দুই. বাড়াবাড়ি, যা মানুষকে আদেশ-নিষেধের সীমানার বাইরে নিয়ে যায়।

প্রথমটি হলো তাফরীত অর্থাৎ শিথিলতা, আর দ্বিতীয়টি হলো ইফরাত অর্থাৎ বাড়াবাড়ি। শরীয়তের আদেশ নিষেধের যথার্থ সম্মানপ্রদর্শনের আলামত হলো, যেসব বিষয়ে সুযোগ বা রুখসত রয়েছে সেগুলোর সাথে এমনভাবে ভেসে না যাওয়া, যা মানুষকে মধ্যমপন্থা থেকে বিচ্যুত করে দেয়। উদাহরণত, প্রচণ্ড গরমে জোহরের নামায দুপুরের তাপদাহ কমে এলে আদায় করা সুন্নত। তবে যদি কেউ ঠাণ্ডা হওয়ার অপোয় থেকে থেকে জোহরের সময় পার করে দেয় অথবা যখন সময় যায় যায় অবস্থা, তখন আদায় করে তবে তা হবে অনুচিত সুযোগ সন্ধান। তাপদাহ কমে এলে জোহরের নামায আদায়ের সুযোগ দেওয়ার হেকমত তো এই যে, প্রচণ্ড গরমে নামায আদায় করলে খুশু-খুযুর সাথে আদায় করা সম্ভব হয় না, বরং তা আদায় হবে বিরক্তি ও বিতৃষ্ণ ভাব নিয়ে। শরীয়তদাতার একটি হেকতম হলো, তিনি এ ক্ষেত্রে দেরি করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে গরমের তেজ কমে আসে এবং মানুষ হুজুরে কালব নিয়ে খুশু-খুযুর সাথে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয়ে নামায আদায়ে সম হয়। আর এটিই হলো নামাযের মাকসুদ। আরো যেসব বিষয় এ পর্যায়ে পড়ে তা হলো, খাবার হাজির থাকাবস্থায় অথবা পেশাব পায়খানার চাপ থাকা অবস্থায় নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা সেসময় উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়েই মানবহৃদয় ব্যস্ত থাকে। আর এভাবে নামাযের উদ্দেশ্য বিঘিœত হয় এবং একাগ্রচিত্তে নামায আদায় করা সম্ভব হয় না। তাই ইবাদত-বন্দেগী আদায় বিষয়ে সঠিক ধারণার একটি অংশ হলো, মানুষ তার কাজ-কর্ম নামাযের পূর্বেই সেরে নিয়ে নামাযের জন্য তার হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে ফারেগ করে নেবে। অতঃপর সে নামাযে এমনভাবে দাঁড়াবে যে, তার হৃদয় আল্লাহর জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত, একমাত্র আল্লাহর প্রতিই গোটা অস্তিত্ব ধাবিত। এই প্রকৃতির দু’রাকআত নামায তার বিগত জীবনের সকল গুনাহ মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সার কথা হলো, কোনো ব্যক্তি এমন ধরনের সুযোগ সন্ধানে যাবে না, যা মূল বিষয় থেকেই তাকে সরিয়ে দেয়।

শরীয়তের আদেশ নিষেধকেন্দ্রিক বাড়াবাড়ির উদাহরণ হলো কোনো ব্যক্তির উযূর সময় ওয়াসওয়াসায় পেয়ে বসে। ফলে সে অতিরঞ্জিতভাবে উযূ করতে শুরু করে। এমনকি পরিশেষে নামাযেরই সময় চলে যায়। অথবা ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা চলে যায়, অথবা সূরা ফাতেহা ছুটে যায়, অথবা পুরো রাকআতই ছুটে যায়।

এমনও ব্যক্তি আছে যে, অতিরঞ্জিত আকারে পরহেজগারী প্রদর্শন করে। এমনকি সে মুসলমানদের খাবার পর্যন্ত গ্রহণ করে না এই ভয়ে যে, পাছে সন্দেহযুক্ত কোনো বিষয়ে জড়িয়ে না পড়ে। এ ধরনের পরহেজগারী কারো কারো ওপর এমনভাবে সওয়ার হতে দেখা যাচ্ছে যে, তারা মুসলিম বিশ্বের সকল খাবার বর্জন করে খৃষ্টানবিশ্ব থেকে আসা খাবার গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এই ভেবে যে, তা নির্ভেজাল ও অধিক পবিত্র। আর এভাবেই চরম অজ্ঞতা ও অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি তাদেরকে মুসলমানদের প্রতি কুধারণা এবং নাসারাদের প্রতি সুধারণার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ।

শরীয়তের আদেশ-নিষেধ তাযীম করার হাকীকত হলো, অনুচিত সুযোগ ও রুখসত সন্ধান এবং অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি থেকে মুক্ত হতে হবে কেননা আসল উদ্দেশ্য হলো সরল সঠিক পথে চলা, যা মানুষকে আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

মুহতারাম হাযেরীন! আল্লাহ তাআলা যেসব কাজের নির্দেশ দিয়েছেন তাতে শয়তান দু’ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালায়। সে হয়তো তা শিথিল করা বা আদৌ আমলে না আনার নির্দেশ দেয়, অথবা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনের নির্দেশ দেয়। দু’টি পরিকল্পনার যে কোনো একটি বাস্তবায়িত হলেই শয়তান নিজকে সফল বলে মনে করে। শয়তান মানুষের হৃদয় ঘেঁটে দেখে। যদি সে তাতে আলস্য, নিরুদ্যম ও সুযোগসন্ধানী ভাব পায় তবে এদ্তসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। বান্দাকে সে নিরুৎসাহিত করে। হিম্মত বসিয়ে দেয়। আলস্য ও নিরুদ্যমের জাল বিছিয়ে দেয়। এমন ব্যক্তির জন্য সে নানা ধরনের অপব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়। বাতিল আশা দিয়ে তাকে ভুলিয়ে রাখে। এমনকি একপর্যায়ে বান্দা শরীয়তের সকল নির্দেশই পরিত্যাগ করে বসে।

এর বিপরীত সে যদি বান্দার হৃদয়ে হিম্মত, উদ্যম, সাহস ও জাগরণ খুঁজে পায় তাহলে তাকে এদ্তসংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শিকারে পরিণত করে। সে তাকে আরো বেশি শ্রম ব্যয়ের নির্দেশ দেয় এবং প্ররোচনা দিয়ে বলে, এতটুকু তোমার জন্য যথেষ্ট নয়। তুমি আরো বেশি করতে পার। তোমার পর্যায় এর থেকেও অনেক উঁচু। তাই তোমার উচিত অন্যান্য আমলকারীদেরকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তোমার উচিত হবে, তারা যখন ঘুমায় তুমি তখন জেগে জেগে ইবাদত করবে, তারা যদি নফল রোযা না রাখে তুমি রাখবে। তারা যদি নামাযের জন্য উযূ করে তাহলে তুমি গোসল করবে। এভাবেই শয়তান মানুষকে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনের পথে নিয়ে যায়। সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করে। যেমন করেছে প্রথম ব্যক্তিকে শিথিলতার শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে। এ উভয় পরিকল্পনার পেছনে শয়তানের উদ্দেশ্য হলো সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে মানুষকে সরিয়ে দেয়া। শয়তানের এ উভয়মুখী ফেতনার জালে অধিকাংশ মানুষ জড়িয়ে পড়ে। যারা গভীর জ্ঞান, পোক্ত ঈমান ও শয়তানকে মোকাবিলা করার মতা রাখে, মধ্যমপন্থা ধরে রাখার দীপ্তপ্রেরণা রাখে, তারা ছাড়া আর সবাই শয়তানের এ জালে ফেঁসে যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন।

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم {وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا} )سورة البقرة : 143( .

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

খুতবায় যা থাকবে : ১.ইসলামের দৃষ্টিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের গুরুত্ব তুলে ধরা, ২.ইসলাম মানবপ্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল দীন তা ব্যক্ত করা, ৩.বাড়াবাড়ি ও কট্টরপন্থা বিষয়ে সতর্ককরণ

اَلْحَمْدُ لِلََّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّيْنَ، وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:

সুপ্রিয় উপস্থিতি! দীন চর্চা ও প্রচারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা মধ্যমপন্থা মুসলিম উম্মাহকে সুসংহত রাখতে সাহায্য করে। উম্মাহর সদস্যদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। বর্ণ, গোত্র, ভাষা ইত্যাদির ভেদাভেদ ঘুঁচিয়ে উম্মাহকে এক প্লাটফর্মে অটল থাকতে সাহায্য করে। বাড়াবাড়ি ও শিথিলতা উভয়টাই উম্মাহকে নানা মত ও পথে বিভক্ত করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে :

{كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ}

‘মানুষ ছিল এক উম্মত। অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে নবীদেরকে প্রেরণ করলেন এবং সত্যসহ তাদের সাথে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত। আর তারাই তাতে মতবিরোধ করেছিল, যাদেরকে তা দেয়া হয়েছিল, তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষবশত। অতঃপর আল্লাহ নিজ অনুমতিতে মুমিনদেরকে হিদায়াত দিলেন যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন’ (সূরা আল-বাকারা:২১৩)

ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন

(: قِيَلَ لِرَسُوْلِ اللَّهِ أَيُّ الْأَدْيَانِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ ؟ قَالَ: الْحَنِيْفِيَّةُ السَّمْحَةُ)

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় দীন কোন্টি? তিনি বললেন, ‘যা খাঁটি ও উদার’ (আহমদ, সহীহ)।

আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(يَسِّرُوْا وَلَا تُعَسِّرُوْا وَبَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوْا إِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِينَ)

‘সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও নিস্পৃহ করো না। তোমরা তো কেবল সহজকারী হিসেবেই প্রেরিত হয়েছ, কঠোরতাকারী হিসেবে প্রেরিত হওনি’ (বুখারী)।

জাবের রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتاً وَلَا مُتَعَنِّتاً، وَلَكِنْ بَعَثَنِيْ مُعَلِّماً مُيَسِّراً)

‘নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে জোরজবরদস্তিকারী ও মানুষকে অসুবিধায় নিপতিতকারী হিসেবে প্রেরণ করেননি। তিনি তো আমাকে প্রেরণ করেছেন শিক ও সহজকারী হিসেবে’ (মুসলিম)।

আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত :

(إِنَّ أَعْرَابِيا بَالَ فِي الْمَسْجِدِ فَثَارَ إِلَيْهِ النَّاسُ لَيَقَعُوْا بِهِ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ: دَعُوْهُ، وَأَهْرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ ذَنُوْباً مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِينَ)

‘জনৈক বেদুইন ব্যক্তি মসজিদে প্রস্রাব করে দিল। লোকেরা মারধোর করার জন্য উত্তেজিত হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বললেন, ‘ওকে ছেড়ে দাও’। আর ওর প্রস্রাবের ওপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমরা তো কেবল সহজকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছ, কঠোরতাকারী হিসেবে প্রেরিত হওনি’ (বুখারী)।

মুহতারাম মুসল্লিয়ান! সন্ত্রাস, মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা, এবং অহেতুক কারণে কোনো মুসলমানকে কাফির বলাও হলো মধ্যমপন্থা থেকে বিচ্যুতি ও সীমালঙ্ঘন। মুসলিম বিশ্বে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যেসব জঙ্গি তৎপরতা চলছে তা কেবলই শয়তানের প্ররোচনা ও খারেজী সম্প্রদায়ের অশুভ আদর্শের অনুসরণ।

হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

(هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُوُنَ. هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُوُنَ. هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُوُنَ)

‘কট্টরপন্থীরা ধ্বংস হোক, ‘কট্টরপন্থীর ধ্বংস হোক, ‘কট্টরপন্থীর ধ্বংস হোক’ (মুসলিম)।

কট্টরপন্থা বলতে বুঝায় কোনো বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অভিমত বা বিধান থাকা সত্ত্বেও একই বিষয়ে এমন অভিমতকে আপন করে নেয়া যা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। যারা এরূপ করে তাদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।

কট্টরপন্থা খারেজীদের আদর্শ। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বন্টন করছিলেন। এমতাবস্থায় যুল খুওয়াইসেরা এসে হাজির হলো। সে ছিল তামীম গোত্রের লোক। সে বলল,‘হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,‘ তোমার জন্য আফসোস! আমি ইনসাফ না করলে আর কে ইনসাফ করবে? তোমার জন্য ধ্বংস ও নিরাশা, যদি আমি ইনসাফ না করি। উমর রাযি. বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমাকে অনুমতি দিন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বললেন,‘ ওকে ছেড়ে দাও’। ওর কিছু সঙ্গী সাথী আছে, যাদের নামায দেখে তোমাদের কেউ স্বীয় নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। তাদের রোযার কাছে তোমাদের কেউ স্বীয় রোযাকে তুচ্ছ ভাববে। ওরা কুরআন পড়ে তবে কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। ওরা দীন থেকে বের হয়ে যাবে যেভাবে বের হয়ে যায় তীর শিকার-জন্তুকে ভেদ করে। তাদের তীরের ফলার দিকে তাকানো হবে, তবে সেখানে কিছুই পাওয়া যাবে না। অতঃপর তাদের ফলায় সংযুক্ত মোচড়ানো অংশের দিকে তাকানো হবে, সেখানেও কিছু পাওয়া যাবে না। এরপর তীরের নিবগুলোর দিকে তাকানো হবে, সেখানেও কিছু পাওয়া যাবে না। শিকারের গোবর ও রক্তকে অতিদ্রুত ভেদ করে বের হয়ে যাবে। (অর্থাৎ এতো দ্রুত বের হয়ে যাবে যে তীর ও তীরের সাথে যুক্ত অংশগুলোয় জন্তুর রক্ত ও গোবরের কোনো লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না)। আর তাদের আলামত হলো, এমন ব্যক্তি যে হবে কালো, তার একটি বাহু হবে নারীর স্তনের ন্যায়, অথবা কম্পমান মাংসপিণ্ডের ন্যায়। মানুষ যখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত থাকবে সেটাই হবে তাদের বের হওয়ার সময়’। আবু সাঈদ রাযি.বলেন, ‘আমি স্যা দিচ্ছি যে এ হাদীসটি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। আমি আরো স্যা দিচ্ছি, আলী রাযি. তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আর আমি তখন তার সাথে ছিলাম। তিনি ওই লোকটিকে হাজির করতে বললেন এবং তাকে দেখতে চাইলেন। অতঃপর লোকটিকে হাজির করা হলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা মোতাবেক পেলাম’ (বুখারী)

বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে,‘তারা দীন থেকে বের হয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং পৌত্তলিকদেরকে ছেড়ে দেবে। আমি যদি তাদেরকে পাই তবে কাওমে আদের মতো তাদেরকে অবশ্যই নিপাত করব’ (বুখারী)।

বুখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনা মতে তারা হবে ‘অল্পবয়সী ও নির্বোধ’। সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনা অনুযায়ী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টিজীব বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তাই অহেতুকভাবে মুসলমানদেরকে কাফির ফতোয়া দেয়া, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা, হত্যাযজ্ঞ চালানো মারাত্মক অপরাধ। যারা এরূপ করে তাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। শরীয়ত পালন ও বাস্তবায়নে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। নানা ধরনের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে মুসলমানদের রক্তপাত থেকে বিরত থাকা।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হই। কট্টরপন্থা ও অনুচিত শৈথিল্য বর্জন করে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সিরাতুল মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকি। যারা কট্টরপন্থা ও অনুচিত শৈথিল্যে নিপতিত তাদেরকে সংশোধনের চেষ্টা করি। আমাদের আওতাধীন যারা রয়েছে, তাদেরকে সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য মেহনত চালিয়ে যাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(أَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالْإِمَامُ الَّذِيْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْؤُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الْرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْهُ، أَلَا فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ)

‘জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যে ব্যক্তি মানুষের আমীর সে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার আওতাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল এবং তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানদের দায়িত্বশীল এবং তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। দাস তার মনিবের সম্পদে দায়িত্বশীল, আর তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। জেনে রাখো! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার আওতাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে’ (বুখারী)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে দীন চর্চার তাওফীদ দান করুন। মধ্যমপন্থী উম্মতের জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন তা আমদের মধ্যে পয়দা করে দিন। আপনি আমাদেরকে শিথলতা ও কট্টরপন্থা উভয়টা থেকে হিফাযত করুন।

হে আল্লাহর আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার গুমরাহী থেকে রা করুন। আপনার খাস রহমত ও করুণায় আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে টিকে থাকার তাওফীক দান করুন। আপনি আমাদের সবাইকে মাফ করে দিন।

হে আল্লাহ যারা না বুঝে কট্টরপন্থার অনুসরণ করছে তাদের আপনি হিদায়েত করুন। তাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান ও অনুভূতি দান করুন। তাদের ফেতনা থেকে উম্মতকে হিফাযত করুন।

হে আল্লাহ সমগ্র পৃথিবীতে আপনার দীন ও শরীয়ত কায়েম করে দিন। মুসলিমবিশ্বের সকল শাসকদেরকে আপনার দীনের জন্য কবুল করে নিন। আপনার রেজামন্দী অনুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.