islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube


নারীর ফিতনা থেকে সতর্ক থাকা


16185
পাঠ সংক্ষেপ
খুতবার উদ্দেশ্য : ১.নারীর ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা, ২.পূতপবিত্র থাকার ব্যাপারে নারীদেরকে দীক্ষিত করে তোলা, ৩.নারীদেরকে পর্দায় রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দান, ৪.নারীর ফেতনার মাধ্যগুলো বন্ধ করার জন্য দিকনির্দেশনা

নারীর ফিতনা থেকে সতর্ক থাকা

প্রথম খুতবা

إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا وَسَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ (يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ) (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا) (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا. يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا) أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ تَعَالَى، وَإِنَّ أَفْضَلَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدَعِةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالِةٌ، وَكُلَّ ضَلَالَةِ فِي النَّارِ، أَمَّا بَعْدُ :

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! মহান আল্লাহ তাআলা গোটা মানব জাতিকে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা দুনিয়া এবং আখিরাতের পরিপূর্ণ কামিয়াবী ও সফলতা তাকওয়ার দ্বারাই অর্জিত হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

{ وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ وَإِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَانَ اللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًا }

আল্লাহর জন্যই রয়েছে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে। আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরী কর তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে সব আল্লাহরই। আর আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত’ (সূরা নিসা, আয়াতÑ ১৩১)।

মানুষকে তাকওয়া অবলন্বনের নির্দেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যে, এর মাধ্যমে তারা যাবতীয় ফিতনা থেকে বাঁচতে পারে।

তাকওয়া কাকে বলে? তাকওয়া হলো, আল্লাহ তাআলা মানুষকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ যত কাজের আদেশ দিয়েছেন তা যাথার্থরূপে পালন করা। আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা।

আর এই আদেশ-নিষেধ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য। তবে পুরুষগণ যেহেতু নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল, তাই তারাই নারীদেরকে তাকওয়াসম্পন্ন করার জন্য শরীয়তসম্মত পন্থায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

{الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ }

‘ পুরুষেরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ্ একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে’ (সূরা নিসা: ৩৪)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শানকিতী রহ. বলেন, এখানে ইঙ্গিত রয়েছে যে, পুরুষগণ নারীদের চেয়ে উত্তম। কারণ সৃষ্টিগতভাবেই পুরুষগণ মর্যাদাবান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। পক্ষান্তরে নারীদের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিগত অপূর্ণতা। আর এ অপূর্ণতা দূর করার জন্যই পুরুষরা তাদের জন্য নানা প্রকার অলঙ্কার ও সৌন্দর্যের উপকরণের ব্যবস্থা করে। পক্ষান্তরে পৌরুষত্বের সৌন্দর্যই পুরুষের জন্য যথেষ্ট।

আমাদের সামনে এ বিষয়টি আজ দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, বর্তমানে মহিলাদের অবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের মহিলাদের মত নয়। তারা আজ অন্যান্য ধর্মের নারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছে। আমাদের আজকের মহিলারা সত্য দীন ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে এমনই এক স্পষ্ট গোমরাহীর দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা তাদেরকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন।

বর্তমানে মহিলারা পুরুষদের সাথে মিলে-মিশে অফিস-আদালতে, কল-কারখানায় চাকরি বাকরি করছে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলে-মিশে পড়ালেখা করছে। বাজারে, রাস্তাঘাটে, গাড়িতে তারা পুরুষের সাথে মিশ্রিত হয়ে চলছে। অথচ ইসলামী শরীয়তে তা পরিস্কারভাবে হারাম ও নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِنْ دُونِهِمُ امْرَأتَيْنِ تَذُودَانِ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّى يُصْدِرَ الرِّعَاءُ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ. فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ. فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا فَلَمَّا جَاءَهُ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ.

‘ যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌঁছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রত। এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছে। তিনি বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ। অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তার কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন। অতঃপর যখন মূসা আ. তার কাছে গেলেন এবং সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন, তখন তিনি (শুআইব আ.) বললেন, ভয় করো না, তুমি জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ’ (সুরা আল-কাসাস: ২৩-২৫)।

সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা! উপরে বর্ণিত বিষয়ে আমাদের একটু চিন্তা করা দরকার। কেননা, এখানে দেখা যাচ্ছে, বালিকা দু’টি তাদের জন্তুুদেরকে এজন্য পানি খাওয়াচ্ছে না যে, রাখালদের থাকা অবস্থায় সেখানে গেলে তাদের পর্দার বিধান লংঘিত হবে। এবার তাদের সাথে তুলনা করে আমাদের যুগের মহিলাদের অবস্থা একটু ভেবে দেখুন, তারা এখন অধঃপতনের কোন্ স্তরে অবস্থান করছে!

আমর ইবনে শুয়াইব রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

( مُرُوْا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ، وَاضْرِبُوْهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ )

‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামায পড়ার আদেশ দাও। অতঃপর তারা দশ বছর বয়সেও যদি নামায পড়তে অভ্যস্থ না হয় তবে তাদেরকে প্রহার করো। এবং এ বয়সে তাদের বিছানাও পৃথক করে দাও’ (আবূ দাউদ, হাকেম)।

হাদীসটি এ-কথার দলীল যে, ইসলাম নারী-পুরুষের সহাবস্থান হারাম ঘোষণা করেছে এবং ছোটবেলা থেকেই তাদের চরিত্রকে পবিত্র রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে। আমরা যারা দায়িত্বশীল তাদের যার যার অবস্থান থেকে এ ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের বিধিমালা যাতে অনুসৃত হয় সে জন্য কাজ করে যেতে হবে ।

অনুরূপভাবে আকর্ষর্ণীয় সাজে সজ্জিত হয়ে মহিলাদের দেহ প্রদর্শনও ইসলামী শরীয়তের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কেননা শরীয়ত মহিলাদেরকে পর্দা করতে বলেছে। চক্ষু অবনমিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন :

{ قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ. وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ }

. মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা আন-নূর: ৩০-৩১)।

উলামায়ে কেরাম বলেন, চোখ হলো অন্তরের জন্য বড় একটি দরজা স্বরূপ। এই চোখের দৃষ্টির কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবৈধ সম্পর্ক জন্ম নেয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি অবনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

লজ্জাস্থানের হিফাযতের অর্থ, যিনা থেকে বেঁচে থাকা যেসব অঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরি তা ঢেকে রাখা যা কিছু মানুষকে অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখে তা অবলম্বন করা।

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

( صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمْ بَعْدُ قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلاتٌ مَائِلاتٌ رُؤُسُهَنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيَحَهَا، وَإِنَّ رِيَحَهَا لَتُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَا )

‘ দুই প্রকার লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে এখনো দেখিনি। একপ্রকার হলো, যাদের হাতে গরুর লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে। তারা এসব চাবুক দ্বারা (অন্যায়ভাবে) লোকদেরকে প্রহার করতে থাকবে। আর আরেক প্রকার হলো ঐসব নারী যারা কাপড় পরিধান করার পরেও উলঙ্গ থাকবে, তারা (পুরুষদেরকে) তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং তারাও (পুরুষদের দিকে) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে দুলে পড়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এমনকি তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে’ (মুসলিম)।

ইবনে আবদুল বার রহ. বলেন, এ হাদীসে ঐসব মহিলার কথা বলা হয়েছে, যারা এমন পাতলা ও মিহি কাপড় পরিধান করে যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্যকে ঢাকতে সক্ষম হয় না। ফলে দৃশ্যত তাদেরকে কাপড় পরিধান করেছে বলে মনে হলেও বাস্তবে তারা উলঙ্গই থাকে। তারা সত্য থেকে বিচ্যুত এবং তাদের স্বামীদেরকেও সত্য থেকে বিচ্যুতকারী। এর সাথে যোগ হবে বর্তমানযুগের সংক্ষিপ্ত-পোশাক পরিধানের প্রবনতা, যা নারীর সৌন্দর্যকে প্রকটভাবে উন্মুক্ত করে দেয়।

أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجَيْمِ : {وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى } (سور الأحزاب: 33)

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

নারীর ফিতনা থেকে সতর্ক থাকা

দ্বিতীয় খুতবা

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً كَثِيْراً كَمَا أَمَرَ، وَأَشْكُرُهُ وَقَدْ تَأَذَّنَ بِالزِّيَادَةِ لِمَنْ شَكَرَ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَلَوْ كَرِهَ ذَلِكَ مَنْ أَشْرَكَ بِهِ وَكَفَرَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ سَيِّدُ الْبَشَرِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ خَيْرِ صَحْبٍ وَمَعْشَرٍ وَعَلَى التَّابِعِيْنَ لَهُ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْراً، أَمَّا بَعْدُ :

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখতে পাবো যে, আমাদের পূর্ববর্তী নবী-রাসূল, ইমাম ও বুযুর্গদের স্ত্রীগণ কত বেশি পবিত্র, পর্দানশীন ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগত বান্দী ছিলেন। যেমন ইফকের ঘটনায় আছে যে- মা আয়েশা রাযি. মহাসম্মানিত সাহাবী হযরত সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল রাযি. এর সাথে একটি কথাও বলেননি। অনুরূপভাবে সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল রাযি.ও মা আয়েশা রাযি.-এর সাথে কোনো বাক্য বিনিময় করেননি। তবে এতটুকু যে, তিনি মা আয়েশা রাযি-এর ‘ইন্নালিল্লাহ’ পাঠ করার শব্দ শুনতে পেয়েছেন। আর এরূপ নিঃশব্দ ও কথাবার্তাহীন অবস্থায় তারা উভয়ে মদীনায় পৌঁছেন।

এমনিভাবে যখন পবিত্র কুরআনে পর্দার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত নাযিল হলো তখন সাথে সাথে মহিলা সাহাবীগণ পর্দা করতে শুরু করলেন। সফিয়্যা বিনতে শাইবা রাযি. উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

(لَمَّا نَزَلَتْ (يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ) خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الْأَكْسِيَةِ .)

‘যখন এ আয়াত নাযিল হলো ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়’, তখন আনসারী মহিলাগণ এভাবে পোশাক পরে (ঘর থেকে) বের হলেন যে, তাদের মাথার ওপর যেন একঝাঁক কাক ছেয়ে আছে’ (আবু দাউদ)।

আল্লাহু আকবার! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশকে তারা কত দ্রুত পালন করতেন।

উম্মে সালামা রাযি. বলেন, আমাকে এক মহিলা সাহাবী বলেছেন :

( إِنِّي امْرَأَةٌ أُطِيْلُ ذَيْلِيْ وَأَمْشِيْ فِي الْمَكَانِ الْقَذِرِ؟ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُطَهِّرُهُ مَا بَعْدَهُ )

‘ আমি আঁচল লম্বা করি। আর আবর্জনাময় জায়গা দিয়ে হাঁটি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পরের জায়গা আঁচলকে পবিত্র করে দেয়’(মালিক, আহমদ ও তিরমিযী)

অর্থাৎ আবর্জনাময় জায়গায় হাঁটার সময় আঁচলে যে নাপাকী অথবা আবর্জনা লাগে পরবর্তী ময়লাহীন জায়গায় হাঁটার ফলে তা দূর হয়ে যায় এবং আঁচল পবিত্র হয়ে যায়।

মহিলা সাহাবীর কথার অর্থ হলো, তিনি তাঁর পা ঢাকার জন্য ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করতেন, আরবের মহিলারা সাধারণত যেমন পরিধান করে থাকে। আর ঐ যুগে মোজা পরিধান করার কোনো রেওয়াজ ছিল না। তাই তারা পর্দা রক্ষার জন্য এভাবে ঝুলিয়ে কাপড় পরতেন। আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছিলেন।

মোটকথা এভাবে মহিলা সাহাবীগণ যখন শরীয়তের আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চললেন তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় ফিতনা থেকে হিফাযত করলেন এবং তাদেরকে দান করলেন মহা পুরস্কার।

মুহতারাম ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরী যে, আমরা যেন নিজ নিজ স্ত্রী-কন্যাদের দীনদারী ও আমল-আখলাকের প্রতি খেয়াল রাখি। কেননা আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর আমাদেরকে কর্তৃত্বশীল বানিয়েছেন। যদি আমরা তা না করি তাহলে তারা বিপথগামী ও বদদীন হয়ে যাবে।

বস্তুত মহিলাদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে অসম্পূর্ণ আকল ও অসম্পূর্ণ দীন দিয়ে। তাইতো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে সদাচরণের ওসীয়ত করছেন। তিনি বলেছেন :

( أَلَا و اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ )

‘ সাবধান! তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করো। কেননা তাদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঁকা হলো উপরের হাড়টি। অতএব যদি তুমি তাকে সোজা করতে যাও তাহলে (সোজা তো করতে পারবেই না বরং) তা তুমি ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে সর্বদা তা বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করো’ (বুখারী)।

উল্লিখিত হাদীসের মধ্যে বিশেষ করে স্ত্রীদের কথা বলা হয়েছে। এর কারণ হলো, স্ত্রীরা দুর্বল এবং স্বামীদের প্রতি তারা মুখাপেক্ষী। তাই স্বামীদেরকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তোমরা আমার ওসিয়ত কবুল করো এবং ওসীয়ত অনুযায়ী আমল করো। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হও এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করো।

হাদীসের মূল বক্তব্য হলো, স্বভাবগতভাবেই মহিলাদের মধ্যে বক্রতা থাকার কারণে তাদেরকে যেমন একেবারে ১০০ভাগ ঠিক করা যাবে না ঠিক তেমনি তাদের প্রতি অমনোযোগীও হওয়া যাবে না। কেননা তখন তারা মানবীরূপী শয়তানে পরিণত হবে। আজকের ব্যাভিচারী নারীরা তার বড় দলীল। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাযত করুন।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে দয়াময় পরম দয়ালু! আপনি আমাদের মহিলাদেরকে পরিপূর্ণভাবে পর্দা করার তাওফীক দিন। তাদের এবং আমাদের সবাইকে মুত্তাকী, পরহেযগার বানিয়ে দিন। ইসলামের সকল বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফীক দিন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নারীদেরকে সংশোধন করে দিন। যারা বেপর্দায় চলে তাদেরকে হিদায়াত করুন। সকল প্রকার বেহায়াপনা থেকে আমাদের দেশ ও সমাজকে রক্ষা করুন।

হে আল্লাহ! যারা দীনে মুহাম্মদীর সাহায্যকারী, আপনি তাদেরকে সাহায্য করুন এবং আমাদেরকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন। আর যারা দীনে মুহাম্মদীকে অপমান ও অপদস্থ করতে চায়, তাদেরকে আপনি লাঞ্ছিত ও অপমানিত করুন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত ও বিপদাপদ থেকে হিফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল রিযক অন্বেষণ করার তাওফীক দিন। আমীন, ইয়া রাব্বালা আলামীন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله: (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.