islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube


জুমআর দিনের আহকাম


6169
পাঠ সংক্ষেপ
‘শুক্রবার হচ্ছে সর্বোত্তম দিবস। এই দিবসে আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে সৃষ্টি করেন। এই দিবসেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিবসেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়। শুক্রবারে মসজিদের আসার পর কর্তব্য হবে যিকর, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত প্রভৃতি ইবাদতে মশগুল হওয়া।

الْحَمْدُ لِلَّهِ الْقَائِلِ : إِذَا نُوْدِيَ لِلِصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوْا الْبَيْعَ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ :

মুহতারাম হাযেরীন! আল্লাহ রব্বুল আলামীন অসীম কুদরতের অধিকারী। তিনি যা ইচ্ছা করেন সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যাকে ইচ্ছা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{ وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ }

‘আর তোমার রব যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং মনোনীত করেন, তাদের কোনো এখতিয়ার নাই। আল্লাহ পবিত্র-মহান এবং তারা যা শরীক করে তিনি তা থেকে ঊর্ধ্বে’ (সূরা আল- কাসাস:৬৮)।

যুগে যুগে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বহু নবী ও রাসূল মনোনীত করেছেন এবং সকল মানুষের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন। আবার ফেরেশতাদের মধ্যে থেকেও তিনি রাসূল বা দূত মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{ اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ }

‘আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা আল-হাজ্জ-৭৫)।

আবার পৃথিবীর কোনো কোনো ভূখণ্ডকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন অন্য সব ভূখণ্ডের উপর। যেমন মাক্কাতুল মুকাররমাকে আল্লাহ তাআলা অন্য সব ভূখণ্ডের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

আবার কোনো কোনো রজনীকে আল্লাহ দান করেছেন শ্রেষ্ঠত্ব অন্য সব রজনীর উপর। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

{ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ }

‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপো উত্তম’ (সূরা: আল কাদর- ৩)।

অনুরূপভাবে কোনো কোনো দিবসকে আল্লাহ দান করেছেন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব। শুক্রবার তেমনই একটি মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত, শ্রেষ্ঠ দিবস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুক্রবারের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন:

( خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الْشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، فِيْهِ خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَفِيْهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيْهِ أُخْرِجَ مِنْهَا )

‘শুক্রবার হচ্ছে সর্বোত্তম দিবস। এই দিবসে আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে সৃষ্টি করেন। এই দিবসেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিবসেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়। (মুসলিম, আবু দাউদ)

হাদীসে আরো এসেছে:

( مَنْ غَسَلَ وَاغْتَسَلَ وَدَنَا وَابْتَكَرَ فَاقْتَرَبَ وَاسْتَمَعَ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوَهَا قِيَامُ سَنَةٍ وَصِيَامُهَا )

‘শুক্রবারে যে ব্যক্তি মাথা ধৌত করবে ও গোসল করবে আগে আগে মসজিদে যাবে এবং ইমামের নিকটবর্তী হবে ও খুতবা শুনবে, সে তার প্রতিটি পদে এক বছরের নফল রোযা ও নফল নামাজের ছাওয়াব লাভ করবে’ (হায়ছামী ও ইবনে খুযাইমা সহীহ রেওয়াতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।

আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে শুক্রবার পেশ করা হলো। জিবরাঈল আ. তাঁর হাতের তালুতে স্বচ্ছ আয়নার আকৃতিতে তা পেশ করলেন, যার মাঝখানে কালো একটি তিলকের মত ছিলো। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জিবরাঈল! এটা কী?’ জিবরাঈল আমীন বললেন,‘এটি শুক্রবার’। আপনার রব আপনাকে তা পেশ করছেন, যেন তা আপনার জন্য এবং আপনার পরবর্তীতে আপনার উম্মতের জন্য উৎসব দিবস হয়। আর আপনাদের জন্য এ দিবসে বহু কল্যাণ রয়েছে। আপনি এর প্রথম অধিকারী। আর ইহুদী নাসারারা আপনার নাগাল পাবে না। শূক্রবারে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে বান্দা আল্লাহর কাছে যে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে তা দান করবেন এবং যে কোনো তি ও অকল্যাণ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে সে তি এবং তার চেয়ে বড় তি থেকেও রা করবেন। আর আখিরাতে এ দিবসকে আমরা ’ইয়াওমুল মাযীদ’ বলে আখ্যায়িত করি’ (তাবারানী উত্তম সনদে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন)।

আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে আল্লাহ তাআলা শুক্রবার দান করেননি। ইহুদীদের জন্য ছিলো শনিবার আর নাসারাদের জন্য ছিলো রবিবার। তাই তারা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমাদের পরে থাকবে। দুনিয়ায় আগমনের দিক থেকে আমরা পরে এসেছি কিন্তু আখিরাতে আমরা হবো অগ্রবর্তী। তবে অন্যান্য সৃষ্টির আগে তাদের ফায়সালা হবে’ (বুখারী ও মুসলিম)।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

( مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ )

‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে জুমআর নামাযে হাজির হবে এবং মনোযোগের সাথে খুতবা শুনবে,ও চুপ থাকবে, এই জুমআ থেকে অন্য জুমআ পর্যন্ত তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে (মুসলিম)।

শুক্রবারের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো জুমআর নামাজ। আর জুমআর নামাজ হচ্ছে সবচে মর্যাদাপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামাজ। ইসলাম জুমআর নামাজের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া এবং যতœবান হওয়ার কথা বলেছে। আর এ নামাজের ছাওয়াবও অন্যান্য নামাজের চেয়ে বেশি।

শুক্রবরের আদব হচ্ছে, ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করা, আতর ও সুগন্ধি ব্যবহার করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা, ইমামের কাছাকাছি বসা, ওয়ায ও নসীহত শোনার জন্য নিজকে প্রস্তুত করা। আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবারে গোসল করল, ঠিক ফরয গোসল করার মতো এবং সর্বপ্রথম মসজিদে গেল, সে যেন একটি উঁট কুরবানী করল’ (বুখারী ও মুসলিম)।

ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘তোমরা জুমআর নামাজে হাজির হও, ইমামের কাছাকাছি হও, কেননা বান্দা দূরবর্তী হতেই থাকে এ পর্যন্ত যে তাকে জান্নাতেও পিছিয়ে দেয়া হবে, যদিও সে জান্নাতে প্রবেশ করে।

মুসল্লিয়ানে কেরাম! শুক্রবারে মসজিদের আসার পর কর্তব্য হবে যিকর, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত প্রভৃতি ইবাদতে মশগুল হওয়া। খুতবা শুরু হলে একাগ্রচিত্তে মনোযোগের সাথে তা শোনা। এরপর খুশু-খুযুর সাথে নামাজ আদায় করা এবং নামাজ শেষে হাদীসে বর্ণিত দু’আগুলো পড়া। তারপর মসজিদে আদায় করলে চার রাকআত সুন্নত আদায় করা। আর ঘরে এসে আদায় করলে দু’রাকআত আদায় করা। তবে ঘরে এসে আদায় করাই উত্তম। বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা থেকে এটাই প্রমাণিত।

শুক্রবারের বর্জনীয় কাজসমূহ

মুহতারাম হাযেরীন! যেসব কাজ-কর্মের কারণে জুমআর নামাজের ছাওয়াব নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ছাওয়াব কমে যায় সেসব কাজ-কর্ম থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি আমাদেরকে জুমআর জামাতে বিলম্বে হাজির হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন।

মুসল্লীদের ঘাড়ের উপর দিয়ে অতিক্রম করে সামনের কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করা থেকে তিনি আমাদেরকে বারণ করেছেন। একবার খুতবা চলাকালে এক ব্যক্তিকে মুসল্লীদের ঘাড়ের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিষেধ করে বললেন, ‘বসে পড়ো, তুমি তো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ’। যারা এরূপ করত তাদের বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশংকা করতেন যে, তারা এই আয়াতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় কি না?

{ وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا }

‘আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে তাদের কৃত কোনো অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ’ (সূরা আল আহ্যাব:৫৮)।

জুমআর জামাতে উপস্থিত হয়ে জোরে জোরে যিকর, অথবা কুরআন তিলাওয়াত করে অন্যান্য মুসল্লীর মনোযোগ নষ্ট করে দেয়া থেকেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। একবার সাহাবায়ে কেরামকে উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত করতে দেখে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করে বললেন :

( لَايَجْهَرُ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ )

‘তোমাদের একজন যেন অন্যজনের উপর উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত না করে’ (আলবানী: সহীহুল জামে)।

সবচে নিকৃষ্ট কাজ হলো পরস্পরে দুনিয়াবী গল্প-গুজব করে মানুষকে কষ্ট দেয়া। যে ব্যক্তি এমন করবে সে জুমআর ফযীলত ও ছাওয়াব থেকে মাহরুম হয়ে যাবে।

আবু হুরাইরা রাযি.থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

(اِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ أَنْصِتْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ )

‘জুমআর দিন খুতবা চলাকালে তুমি যদি তোমার সাথিকে বল, ‘চুপ করো’, তাহলে তুমি অনর্থক কাজ করলে’ ( বুখারী ও মুসলিম)।

আলী রাযি. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জুমআর দিন খুতবা চলাকালে তুমি যদি তোমার সাথিকে বল, ‘চুপ করো’, তাহলে তুমি অনর্থক কাজ করলে’ আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করল তার কোনো জুমআ কবুল হবে না’ (আহমদ)।

মুহতারাম হাযেরীন! শরীয়মসম্মত ওযর ছাড়া জুমআর নামাজ তরক করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। যে ব্যক্তি বিনা ওযরে জুমআর নামাজ তরক করে সে গাফলতের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং তার কলবে মহর লেগে যায়। আর যার কলবে মহর লেগে যায় তার অন্তরচু অন্ধ হয়ে যায়, আর তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

(لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوْبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُوْنُنَّ مِنْ الْغَافِلِيْنَ)

‘হয়তো লোকেরা জুমআর নামাজ তরক করা থেকে বিরত থাকবে, নতুবা আল্লাহ তাদের হৃদয়ে মহর মেরে দিবেন। তখন তারা নিশ্চিতই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (মুসলিম)।

অন্য এক হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :

( مَنْ تَرَكَ الْجُمُعَةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ )

‘অবহেলাবশত যে ব্যক্তি তিনটি জুমআ তরক করে, আল্লাহ তার কলবে মহর মেরে দেন’ (তিরমিযী, হাসান)।

সুতরাং মুহতারাম হাযেরীন! আসুন আমরা জুমআর নামাজের প্রতি যতœবান হই এবং জুমআর দিনের আদব রা করি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা জুমআর ফযীলত ও বরকত লাভ করতে সম হব। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে তাঁর রেজামন্দী অনুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।

{أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ. }(سورة الجمعة:৯)

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِيْ الْقُرآنِ اْلَعَظِيْم وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكْمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَاسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُؤْمِنِيْنَ، فَاسْتَغْفِرُوْهُ إنَّهُ هُوَ الَغَفُوْرُ الرَّحِيْم

মুহতারাম হাযেরীন! শুক্রবারের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যা শুধুমাত্র এ দিনের জন্যই খাস। শুক্রবারের ফযীলত ও বরকত লাভ করার জন্য সে আমলগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া জরুরি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুক্রবারের ফজরের নামাজে প্রথম রাকআতে সূরা আলিফ লাম আস্সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আদ্দাহর তিলাওয়াত করতেন। সুতরাং শুক্রবারের প্রথম আমল হলো ফজরের নামাযের দুই রাকআতে এই দুই সূরা পাঠ করা।

শুক্রবারের আরেকটি বিশেষ আমল হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ করা। হাদীসে শুক্রবার দিন ও রাতে নবী আলাইহিস সালামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

( أَكْثِرُوْا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ، فَإِنَّهُ أَتَانِي جِبْرِيْلُ آنِفا عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ : مَا عَلَى الْأَرْضِ مِنْ مُسْلِمٍ يُصَلِّي عَلَيْكَ مَرَّةً وَاحِدَةً، إِلَّا صَلَّيتُ أَنَا وَمَلَائِكَتِيْ عَلَيْهِ عَشْراً. )

‘শুক্রবারে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। এই মাত্র জিবরীল আমীন আল্লাহর প থেকে আমার কাছে এসে বলে গেলেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কোনো মুসলমান আপনার প্রতি একবার দরুদ পড়লে আমি তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করবো আর আমার ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দুআ করবে’ (আলবানী, সহীহুত তারগীব)।

তাছাড়া কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজীর প্রতি দরুদ পাঠের আদেশ করেছেন:

{ إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا }

‘নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দু‘আ করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (সূরা আল আহযাব:৫৬)।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন,‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন মানবকুলের সরদার, আর জুমআর দিন হলো সকল দিনের সরদার, তাই এই দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

শুক্রবারের আরেকটি বিশেষ আমল হলো, জুমআর নামাযে সূরা জুমআ ও সূরা মুনাফিকুন কিংবা সূরা আ’লা ও গাশিয়া তিলাওয়াত করা।

মুহতারাম হাযেরীন! শুক্রবারের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যখন দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :

(فِيْهِ سَاعَةٌ . لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ ، وَهُوَ يُصَلِّيَ ، يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئاً، إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ )

‘জুমআর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যখন কোনো মুসলমান নামায পড়া অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন’ (বুখারী ও মুসলিম)।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি কত বড় মেহেরবানী! তিনি বান্দাদের জন্য তার রহমতের দরজাগুলো খুলে দেন। যাতে তারা তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নেয়। মাহরুম তো সেই যে এ দিনের ফযীলত থেকে মাহরুম হয়, বঞ্চিত তো সেই যে এ দিনের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়।

মুহতারাম হাযেরীন! সেই বিশেষ মুহূতর্টি কোন্ মুহূর্ত, এবিষয়ে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন সময়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে সর্বাধিক গৃহীত মত হলো, আসরের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

(يَوْمُ الْجُمُعَةِ ثِنْتَا عَشْرَةَ، يُرِيدُ سَاعَةً، لا يُوجَدُ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ شَيْئًا إِلا آتَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْر )

‘জুমআর দিন বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি সময় আছে যে, কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তা দান করেন। সুতরাং তোমরা আসরের পর শেষ সময়ে কাঙ্খিত সে সময়টির অনুসন্ধান করো’ (আবু দাউদ, সহীহ)।

সুতরাং শুক্রবার পুরো দিন এবং এই বিশেষ সময়গুলোতে দুআর প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত।

মুহতারাম হাযেরীন! আমাদের সবার উচিত জুমআর দিনকে যথার্থরূপে তা’যীম করা, সম্মান করা। জুমআর দিনের সুন্নাতগুলো জেনে গুরুত্বের সাথে তা পালন করা।

তাই আসুন, আমরা জুমআর সুন্নতগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নামি। অতঃপর ভালোভাবে গোসল করি, মিসওয়াক করি, পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করি, সকাল-সকাল মসজিদে চলে যাই। আর যেসব কজকর্ম থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন সেসব কাজকর্ম ধেকে বিরত থাকি। আদব ও সুন্নাতের প্রতি উদাসিনতা প্রদর্শন না করি। আর জামাআতে শরীক হওয়া এবং সুন্নাত অনুযায়ী আমলের ক্ষেত্রে অলসতা ও অবহেলা না করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাযত করুন। জুমআর দিনের করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله ِ: (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.