islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube

ঈদুল আযহা


11384
পাঠ সংক্ষেপ
ঈদুল আযহা ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের ঈদ। ঈদুল আযহা দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি করুণা প্রদর্শনের ঈদ। ঈদুল আযহার অনুষ্ঠিত হওয়ার কালেই লক্ষ লক্ষ মুসলমান অবস্থানরত থাকে পবিত্র ভূমিতে হজ্বব্রত পালনাবস্থায়। ঈদুল আযহায় কুরবানী করার মাধ্যমে প্রকাশ পায় দানশীলদের বদান্যতা, অনাথ-দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি।
خَيْرِ الذَّاكِرِيْنَ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ :

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

হামদ ও সালাতের পর। হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমি আমার নিজকে এবং আপনাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনের ব্যাপারে অসিয়ত করছি। অতএব আপনারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করুন তাঁর ইবাদত করুন তাঁর তরে সিজদায় লুটিয়ে পড়ুন এবং সকল প্রকার ভালো কাজে নিমগ্ন থাকুন। এতে আপনারা উভয় জাহানে সফল হবেন। কৃতকার্য হবেন। কামিয়াবী আপনাদের পদচুম্বন করবে।

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আজকের দিন ঈদুল আযহার দিন। মুবারক ও সম্মানিত দিন। মহান আরাফা দিবসের পরে আসা মহিমান্বিত দিন। এ দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহর নামে কুরবানী করা। একমাত্র আল্লাহর জন্য মুসলমানের সবকিছু কুরবান তথা নিবেদিত এ কথার জানান দেয়া।

কুরবানী করা ইবরাহীম আ. এর আদর্শ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরবানী বিধিবদ্ধ করেন যখন তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান কলিজার টুকরো ঈসমাঈল আ. কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। দুনিয়ার সকল কিছু, এমনকি বার্ধক্য বয়সে নিয়ামত হিসেবে প্রাপ্ত প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানী করে দিতে পারেন কি না তারই পরীক্ষা নেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে পরমপ্রিয় সন্তান কুরবানী দেয়ার নির্দেশ দেন। ইবরাহীম আ. নির্দ্বিধায় সে নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আল্লাহ তা‘আলা ঈসমাইল আ. এর স্থলে কুরবানীর জন্য জান্নাত থেকে একটি জন্তু পাঠান। ইরশাদ হয়েছে :

{رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ . فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ . فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ. فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ . قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ. إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ . وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ}

‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’ সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে ইসমাঈলকে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, ‘তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’। ‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান যবেহের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম’। (সূরা আস সাফ্ফাত:১০০-১০৭)।

সেই থেকে চালু হয় কুরবানী করার আদর্শ, আল্লাহর জন্য সবকিছু ত্যাগ করার নিদর্শন হিসেবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

{ وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ }

‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিযক হিসেবে দিয়েছেন তার ওপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ অতএব তারই কাছে আত্মসমর্পণ করো: আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও’ (সূরা হজ্জ, আয়াত : ৩৪)।

الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله، الله أكبر الله أكبر ولله الحمد

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা কুরবানী করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:

{ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ }

‘অতএব তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ো এবং কুরবানী করো’ (সূরা আল কাউসার: ২)।

যারা সামর্থবান তাদের ওপর কুরবানী করা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব। অন্যান্য মাযহাবে সুন্নত। ইমাম শাবী রহ. বলেন সাহাবায়ে কেরাম হজ্ব আদায়কারী ও মুসাফির ব্যতীত অন্য কাউকে কুরবানী তরক করার অনুমতি দিতেন না।

কুরবানী করার উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করা। অন্যের ওপর গর্ব প্রকাশের জন্য কুরবানী করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ইরশাদ হয়েছে :

{ لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِين }

‘ আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশ্ত ও রক্ত বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়েত দান করেছেন সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও’ (সূরা আল হজ্জ:৩৭)।

আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি.বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় মানুষ বকরী দ্বারা নিজের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করত। নিজেরাও খেত, অপরকেও খাওয়াত। এরপর তো মানুষের মাঝে কুরবানী নিয়ে পরস্পরে গর্ব করা শুরু হয়ে যায়, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন’ (ইবনে মাজাহ)।

প্রিয় উপস্থিতি! আমরা কুরবানী করব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তবে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি বড় মেহেরবান। তিনি আমাদেরকে কুরবানীর গোশত নিজেরা খাওয়া ও অভাবীদের খাওয়ানোর অনুমতি দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :

{ وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ. }

‘ আর কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সূরা আল হজ্জ:৩৬-৩৭)।

কুরবানী ঈদের দিন করাই উত্তম। ঈদের নামায আদয়ের পর থেকেই কুরবানীর সময় শুরু হয়ে যায়। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ঈদ পরবর্তী দু’দিন অর্থাৎ ১২যিলহজ পর্যন্ত এবং জমহূর ফুকাহাদের নিকট ঈদ পরবর্তী তিনদিন অর্থাৎ ১৩ যিলহজ পর্যন্ত কুরবানী করা চলে। নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করাই উত্তম। তবে অন্যকে দিয়ে যবেহ করালেও বৈধ হবে।

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

তাকবীর দেয়ার বিধান

প্রিয় মুসল্লীবৃন্দ! আরাফা দিবসের ফজরের নামায থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন আসরের নামায পর্যন্ত প্রতি ফরয নামাযের অব্যবহিত পরেই কমপক্ষে একবার তাকবীর পড়া হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব। অন্যান্য মাযহাবে সুন্নত। তাকবীর হলো :

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! ঈদের দিন বৈধভাবে আনন্দ প্রকাশের অধিকার আমাদের রয়েছে। আয়েশা রাযি.বলেন :

( كَانَتْ الْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ يَوْمَ عِيدٍ، فَدَعَانِي رَسُولُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكُنْتُ أَطَّلِعُ مِنْ عَاتِقِهِ، فَأَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ: دَعْهَا، فَإِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا وَهَذَا عِيدُنَا )

‘ হাবশী লোকজন ঈদের দিন খেলাধূলা করত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খেলা দেখার জন্য) আমাকে ডাকলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গর্দানের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে তাদের খেলা দেখতে লাগলাম। এমন সময় আবু বকর রাযি. এসে আমাকে খেলা দেখা থেকে বারণ করতে চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাকে খেলা দেখতে দাও। কেননা প্রত্যেক জাতির জন্য একটি ঈদ বা খুশির দিন থাকে। আর আজকের দিনটা হলো আমাদের ঈদ’ (আহমদ, সহীহ)।

অন্য রেওয়ায়েতে আছে :

( لِتَعْلَمَ يَهُوْدُ أَنَّ فِيْ دِيْنِنَا فُسْحَةً)

‘ইহূদীরা জানুক যে, আমাদের ধর্মেও আনন্দ প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে’ (আহমদ)।

আয়েশা রাযি. থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে :

( أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ فِي أَيَّامِ مِنَى تُدَفِّفَانِ وَتَضْرِبَانِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ مُتَغَشٍّ بِثَوْبِهِ، فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ عَنْ وَجْهِهِ، فَقَالَ: دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ، فَإِنَّهَا أَيَّامُ عِيدٍ )

‘ মিনার কোনো এক দিবসে আবু বকর রাযি. তার কাছে এলেন। এসময় তার নিকট দু’টি বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আবু বকর রাযি. বালিকাদ্বয়কে ধমক দিলেন। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চেহারা উন্মুক্ত করে বললেন, হে আবু বকর! তাদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও (কিছু বলো না) কারণ এই দিনগুলো হলো ঈদের দিন’ (বুখারী)।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে তাঁর দীন বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন।

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً كَثِيْراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، صَلَّىَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ، وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كِثِيْراً إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ :

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

প্রিয় ভাইয়েরা! ঈদের দিন বহু তরুণী-যুবতীকে দেখা যায়, উত্তমরূপে সাজগোজ করে বেপর্দা হয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। অথচ এভাবে বেপর্দা হয়ে মেয়েদের বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা একান্ত আবশ্যক।

সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য অন্যান্য দিন তো বটেই, বিশেষ করে ঈদের দিন চোখ নীচু রাখা এবং দৃষ্টির হিফাযত করা অত্যন্ত জরুরী। (কেননা ঈদ শুধু আনন্দ সর্বস্ব কোনো অনুষ্ঠানের নাম নয়, বরং তা ইবাদতও বটে। তাই ইবাদতের সাথে কোনো গুনাহের যেন সংমিশ্রন না ঘটে সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা অতীব প্রয়োজন)।

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

একই দিনে ঈদ ও জুমআ একত্রিত হলে

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

( قَدْ اجْتَمَعَ فِيْ يَوْمِكُمْ هَذَا عِيْدَانِ، فَمَنْ شَاءَ أَجْزَأَهُ عَنْ الْجُمُعَةِ ، وَإِنَّا مُجَمِّعُوْنَ )

‘ তোমাদের এই দিনে (শুক্রবারে) দু’টি ঈদ একত্রিত হয়েছে। সুতরাং কেউ চাইলে জুমআর পরিবর্তে শুধু ঈদের নামাযই পড়তে পারে। আমরা অবশ্য উভয়টাই আদায় করব’ (আবু দাউদ)।

তবে এর দ্বারা যোহরের নামাযের ফরয বাতিল হবে না। অর্থাৎ জুমআ না পড়লেও যোহর অবশ্যই পড়তে হবে।

উসমান রাযি.-এর খেলাফতকালে একদা যখন এরূপ ঘটনা ঘটেছিল তখন তিনি উপরে বর্ণিত জুমআর নামায না পড়ার অনুমতির বিষয়টি পরিস্কার করেছিলেন। আবু উবাইদ রাযি. বলেন, ‘একদিন আমি উসমান ইবনে আফ্ফান রাযি. এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। আর ঐদিন ছিল জুমআর দিন। তিনি খুতবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলেন। তারপর খুতবা দিলেন। অতঃপর বললেন,‘হে লোকসকল! তোমাদের এই দিনে (শুক্রবারে) দু’টি ঈদ একত্রিত হয়েছে। সুতরাং যারা আওয়ালীবাসী (দূরবর্তী একটি এলাকা) তারা চাইলে জুমআর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। আবার কেউ চলে যেতে চাইলে তাকে চলে যাওয়ারও অনুমতি আমি দিচ্ছি’ (বুখারী)।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আজ যিলহজ মাসের দশ তারিখ। এ মাসেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে মুসলমানদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। মুসলমানদের জন্য তাঁর নিয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে :

{ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِينًا }

‘ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সূরা আল- মায়েদা: ৩)।

দীন পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ, দীনকে সুসংহত করে দেয়া। শঙ্কামুক্ত করে দেয়া। দীনের বিধানাবলী পরিপূর্ণ করে দেয়া।

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

আর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দেয়ার একটি দিক হলো, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের হৃদয়কে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। ফলে মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এর বড় প্রমাণ, নিয়াতম পরিপূর্ণ করে দেয়ার ঘোষণার সময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল এক হাজারের কিছু বেশি। আর বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা শতকোটিরও ঊর্ধ্বে। নিয়ামত পরিপূর্ণ করার আরেটি দিক হলো, ইসলামকে সকল দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া, প্রকাশ করে দেয়া। আরব উপদ্বীপে ইহূদীধর্ম ছিল, খৃষ্টধর্ম ছিল, পৌত্তলিকতা ছিল, অগ্নিপূজা ছিল। ইসলাম সবগুলোকেই জাযিরায়ে আরাবিয়া (আরব উপদ্বীপ) থেকে বিদায় করে দিয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে :

{ هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا }

‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়েত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটাকে সকল দীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল ফাতহ: ২৮)।

নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দেয়ার আরেকটি দিক হলো, কাফির, মুশরিকদের পবিত্র হারাম অঞ্চলে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া। পবিত্র অঞ্চল শুধু মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়া ফলে মুসলমানরা সুযোগ পেয়ে যায় অভিন্ন শরীরে পরিণত হবার। এক ও অদ্বিতীয় মাবুদের নির্বিঘ্ন তাওহীদ চর্চায় রত হবার। এক কালেমা মজবুত করে আঁকড়ে ধরার। সবাই এক ও অভিন্ন পথে চলতে এটা নিঃসন্দেহে এক বিশাল নিয়ামত। আহলে ঈমান প্রতিষ্ঠিত হলো এবং আহলে কুফর নিপাত গেল।

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের রয়েছে পরিপূর্ণ দীন এবং পরিপূর্ণ আদর্শিক নিয়ামত। তাই আমাদের উচিত, পরিপূর্ণভাবে ইসলামের আওতাধীন চলে আসা। আধা ইসলাম আধা অনিসলামের পর্যায় থেকে সরে আসা। কেননা এভাবে দীন চর্চা করলে মুমিন হওয়া যায় না। মুমিন হতে হলে পুর্ণরূপে ইসলামের অসুরারী হতে হবে।

ঈদের দিন সবার জন্য প্রাণ খুলে দু’আ করা

উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. এর গোলাম আদহাম বলেন, আমরা দুই ঈদে উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.কে বলতাম,

( تقبل الله منا ومنك يا أمير المؤمنين )

হে আমীরুল মুমেনীন! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পক্ষ থেকে ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন’। একথা শুনে তিনি জবাব দিতেন তবে আমাদেরকে বারণ করতেন না’ (বায়হাকী) ।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে শরীয়তের সীমানায় থেকে ঈদের খুশি প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। সেই সাথে সকল প্রকার বিবাদ-বিসংবাদ থেকে আমাদের হিফাযত করুন।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে মেহেরবান মাওলা! যদিও আমাদের গুনাহের কোনো সীমা নেই, কিন্তু আপনার দয়া তো আমাদের গুনাহ অপেক্ষা অতি বিশাল ও বিস্তৃত। সুতরাং আপনার অফুরন্ত রহমতের উসীলায় আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিন।

হে আল্লাহ! আপনি মহাক্ষমাশীল, ক্ষমা আপনি পছন্দ করেন। অতএব আমাদের যাবতীয় ত্র“টি-বিচ্যুতি নিজগুণে ক্ষমা করে দিন।

হে পরমপ্রিয় মাওলা! দয়া করে আপনি গোটা পৃথিবীতে সুখ, শান্তির ফয়সালা করুন। প্রতিটি দেশে আপনার পছন্দনীয় শাসক নিযুক্ত করুন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে আমাদেরকে দাঁড়ানোর তাওফীক দিন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত ও বিপদাপদ থেকে হেফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল কামাই করার তাওফীক দিন।

হে দয়ালু প্রভু! আমাদের যাবতীয় পেরেশানী দূর করে দিন। আমাদের কামাই-রুযিতে বরকত দিন। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দীনদার, মুত্তাকী ও পরহেযগার বানিয়ে দিন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله ِ: (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.