islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube


আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখার উৎসাহ দান


7083
পাঠ সংক্ষেপ
আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরী, তা ছিন্ন করা হারাম।আত্মীয়তা-সম্পর্ক দীনদারী ও তাকওয়া-পরহেযগারীর একটি মূল বিষয়। আর এ সম্পর্কের সাধারণ দাবি হলো আত্মীয়-স্বজনদের নসীহত করা, তাদের সৎ পরামর্শ দেওয়া, একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা, পরস্পরকে ভালোবাসা, ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা, ওয়াজিব বা জরুরী হক এবং যথাসাধ্য নফল বা ঐচ্ছিক হকসমূহ আদায় করা, আত্মীয়-স্বজনকে সুশিক্ষিত করে তোলা, তাদেরকে সুপথ দেখানো, দিক-নির্দেশনা দেয়া, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, আত্মীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাদে দুঃখে সমব্যথী হওয়া এবং তাদের কষ্ট দূর করা। বিপদাপদে সাহায্য করা।

اَلْحَـمْدُ لِلَّهِ الْمُعِـزِّ لِمَنْ أَطْـاعَهُ وَاتَّبَـعَ رِضَـاهُ، أَوْجَـبَ صَـلَةَ الْقُرْبَى وَأَعْـظَمَ فِيْ ذَلِكَ الثَّـوَابَ وَالْأَجْـرَ، أَحْمَـدُهْ سُـبْحَانَهُ وَأَشْكُـرُهُ، وَأَشْـهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْـدَهْ لَا شَـرِيْكَ لَهُ، وَأَشْـهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَـمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُـوْلُهُ، صَلَّى اللهُ وَسَـلَّمَ وَبَارَكَ عَلَيْهِ، وَعَلَىَ آلِـهِ وَأَصْحَـابِهِ وَالتَّابِعِـيْنَ لَهُمْ بِإِحْـسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ. أَمَّا بَعْدُ:

মুসল্লিয়ানে কিরাম! আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেটি এমন এক বিষয়, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের রিযিক বাড়িয়ে দেন, হায়াত দারাজ করেন, এবং ধন-সম্পদে বরকত দান করেন। হ্যাঁ, সেটি হলো আত্মীয়তা-সম্পর্ক। আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলতে বুঝানো হয়, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং এসবের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন আত্মীয়।

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরী, তা ছিন্ন করা হারাম- একথা স্পষ্টভাবে আল কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে। যারা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করে, আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেয়, বিপদাপদে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রশংসায় আল কুরআনে ইরশাদ করেন:

{وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ}

‘ আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে’ (সূরা আর - রা‘দ : ২১)

পক্ষান্তরে যারা এ সম্পর্ক অটুট রাখে না তীব্র ভাষায় তাদের ভর্ৎসনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

{وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ}

‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের মন্দ আবাস’ (রা‘দ : ২৫)

যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে না তাদের ধমক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

{فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ}

‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন-কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন’ (মুহাম্মদ : ২২-২৩)

রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

{وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا}

‘ আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়দের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক’ (নিসা : ০১)

এসব আয়াত থেকে আমরা সুস্পষ্ট বুঝতে পারি, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আত্মীয়তা-সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ সম্পর্ক ক্ষুণœ করতে নিষেধ করেছেন।

প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা কি আল্লাহর বাণীর মর্ম অনুধাবন করতে পেরেছি? তাহলে কি এরপরও আমরা আত্মীয়-পরিজন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো? আত্মীয়-পরিজনদের ভুলে গিয়ে গোমরাহিতে ডুবে থাকবো? আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতার পুনরাবৃত্তি করতে থাকবো? রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনে উদাসীন থাকবো?

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

(إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْ خَلْقِهِ قَالَتِ الرَّحِمُ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنْ الْقَطِيعَةِ قَالَ نَعَمْ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ قَالَتْ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَهُوَ لَكِ)

‘ আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টি বস্তু সৃষ্টি করেন। যখন তিনি সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করেন তখন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলে উঠল, ‘এটি আপনার কাছে আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্নকারী হতে আশ্রয়ের স্থান’। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে আমিও তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবো আর যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো?’ আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলল, ‘জি অবশ্যই, হে আমার রব’ তিনি বললেন, ‘এটা শুধু তোমার জন্য’ (বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা চাইলে এ আয়াত পড়ে দেখ :

{فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ}

‘ তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে?’ (সূরা মুহাম্মদ : ২২) {বুখারী}

আনাস ইব্ন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :

(إِنَّ الرَّحِمَ مُعَلَقَةٌ بِالْعَرْشِ تُنَادِيْ بِلِسَانٍ لَهَا ذَلِقٍ : اللَهُمَّ صِلْ مَنْ وَصَلَنِيْ، وَاقْطَعْ مَنْ قَطَعَنِيْ)

‘নিশ্চয় আত্মীয়তা-সম্পর্ক আরশকে আকঁড়ে ধাকবে। সে তার তীক্ষè জিহ্বা দিয়ে ডাক দিয়ে বলবে, ‘হে আল্লাহ, যে আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন কর আর যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর’ তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলবেন, ‘আমি রাহীম রাহমান (আমি দয়ালু, পরম করুণাময়) আর ‘রাহিম’ (رَحِمْ) তথা আত্মীয়তা-সম্পর্ক শব্দটিকে আমার নাম থেকে বের করেছি। সুতরাং যে এর সাথে সুসম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সুম্পর্ক রাখবো আর যে এ সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো’ (আল ফাওয়াইদুল মুন্তাকাত, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং ৯৭, সহীহ)

আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বাণিজ্য সফরে শাম দেশে গেলে সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবরণ জানতে চান। জবাবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবরণ তুলে ধরেন এভাবে : ‘তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তোমাদের পিতৃবর্গ যা বলেন তা বর্জন করো। আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক শুভ্রতা ও আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করেন’ (বুখারী)।

এ থেকে আমরা জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের সূচনাকালে যেসব বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখা তার মধ্যে অন্যতম। আমরা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি দুইভাবে: এক. কিছু কাজ করার মাধ্যমে। যেমন : আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবং তাদের সঙ্গে সদাচার অব্যাহত রেখে। দুই. কিছু কাজ না করার মাধ্যমে। যেমন : আত্মীয়দের কষ্ট না দেয়া এবং তাদের অনিষ্ট না করা।

মুহতারাম শ্রোতামণ্ডলী! আত্মীয়তা-সম্পর্ক দীনদারী ও তাকওয়া-পরহেজগারীর একটি মূল বিষয়। আর এ সম্পর্কের সাধারণ দাবি হলো আত্মীয়-স্বজনদের নসীহত করা, তাদের সৎ পরামর্শ দেওয়া, একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা, পরস্পরকে ভালোবাসা, ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা, ওয়াজিব বা জরুরী হক এবং যথাসাধ্য নফল বা ঐচ্ছিক হকসমূহ আদায় করা, আত্মীয়-স্বজনকে সুশিক্ষিত করে তোলা, তাদেরকে সুপথ দেখানো, দিক-নির্দেশনা দেয়া, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, আত্মীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাদরে দুঃখে সমব্যথী হওয়া এবং তাদের কষ্ট দূর করা। বিপদাপদে সাহায্য করা।

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার ফযীলত

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা মানুষের হায়াত দরাজ হয়, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

(مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ)

‘ যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিযক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে’ (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এও বলেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য, যে অন্যপক্ষ থেকে তার সাথে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে তা স্থাপন করে। পক্ষান্তরে যার সাথে সম্পর্ক বহাল আছে, তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে তা হবে ভালো সম্পর্কের প্রতিদানে ভালো সম্পর্ক রাখা। এটি যদিও আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যেই পড়ে, কিন্তু যে ব্যক্তি, সম্পর্কের টানপোড়েন চলছে, এমন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তার ছাওয়াব হবে অনেক বেশি এবং তার প্রতিদান হবে অনেক বড়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

(لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا)

‘ সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা জোড়া দেয়’ (বুখারী)

বেরাদারনে মিল্লাত! আল্লাহর তা‘আলার পক্ষ হতে দেওয়া একমাত্র দীন, ইসলামে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করার প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, কাফির আত্মীয়দের সাথেও যথার্থরূপে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আসমা বিনতে আবূূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকা অবস্থায় একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখো’ (বুখারী)।

মু‘আয্যাজ হাযেরীন! আমাদের প্রিয় ধর্মে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মর্যাদা এমনই। আমরা কি আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে অবগত? আমরা কি পালন করি তাঁর নির্দেশ? আমরা কি বর্জন করি তার নিষেধকৃত বিষয়সমূহ? ভেবে দেখুন, আমরা কি আত্মীয়তা-সম্পর্কই ঠিক রাখি? তাদের সাথে সাক্ষাৎ করি? তাদের খোঁজ-খবর নেই? তাদের সাথে সম্পর্কহীনতা, তাদের ব্যাপারে অন্তরের অনুদারতা কি ক্ষমার যোগ্য হতে পারে?

হে দুনিয়া-আখিরাতের সাফল্য প্রত্যাশী ভাই, আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখুন। আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন না কখনো। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে, তাদের সাথে যোগাযোগ ঠিক রাখলে কত বেশি সওয়াব আর কত লাভ তা সবসময় মনে রাখবেন।

মুমিন-মুসলমান ভাইয়েরা! জানেন কি আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখলে কত লাভ? এর লাভ দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে। সংক্ষেপে সেদিকে ইশারা করছি :

১. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা ঈমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রকাশ।

২. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা রিযক ও হায়াত বৃদ্ধির কারণ।

৩. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্বসূরী বুযুর্গদের উক্তি

উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বংশগত বিদ্যা শিক্ষা করো অতঃপর আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করো। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তোমাদের কারো সাথে তার ভাইয়ের বিবাদ হবে, যদি সে জানতো তার ও তার ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তা-সম্পর্কের কী গুরুত্ব রয়েছে, তাহলে তা তাদের এই সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে বিরত রাখতো’ (তাফসীরে তাবারী : ১/১৪৪)।

আতা ইবন আবী রাবাহ রহ. বলেন, ‘আমি আমার আত্মীয়ের জন্য এক টাকা খরচ করাকে দরিদ্র ব্যক্তির জন্য এক হাজার টাকা খরচ করার চেয়ে উত্তম মনে করি। একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আবূূ মুহাম্মদ, যদি আত্মীয়টি আমার মতো ধনী হয় তবুও? তিনি বললেন, যদি সে তোমার চেয়েও বড় বিত্তশালী হয় তবুও’ (ইবনে আবিদ্দুনিয়া, মাকারিমুল আখলাক : ৬২ পৃ.)।

সাঈদ ইবন মুসাইয়িব রহ. কিছু অর্থ রেখে গিয়েছিলেন। তিনি বলতেন,‘হে আল্লাহ, আপনি জানেন, আমি কেবল নিজের দীন ও বংশকে নিরাপদ রাখার জন্য অর্থ সঞ্চয় করেছি। যে ব্যক্তি অর্থ সঞ্চয় করল না আর তা দিয়ে অন্যের পাওনা পরিশোধ করল না এবং আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করতে পারল না আর নিজকে বাঁচাতে পারল না, তাতে কোনো কল্যাণ নেই’ (আল আদাব আশ শরইয়্যা : ৩/২৬২)

আমর ইবন দীনার রহ. বলেন, ‘নিশ্চিত জেনো, ফরয আদায়ের জন্য কদম ফেলার সর্বোত্তম পদক্ষেপ সেটি, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার জন্য ফেলা হয়’।

সুলাইমান ইবন মূসা রহ. বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাইরিযকে জিজ্ঞেস করা হলো, আত্মীয়তা-সম্পর্কের হক কী? তিনি বললেন, যখন সে এগিয়ে আসে, তখন তাকে স্বাগত জানানো আর যখন সে পিছিয়ে যায় তখন তার পেছনে যাওয়া’ (আল আদাব আশ শরইয়্যা)।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফীক দান করুন।

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً كَثِيْراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى، أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ، وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْراً إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ :

সম্মানিত উপস্থিতি! আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যে যেমন অনেক সওয়াব ও বড় নেকি রয়েছে, তেমনি তা নষ্ট করার মধ্যে রয়েছে অনেক গুনাহ ও ক্ষতি। যেমন : বলা হয়েছে আত্মীয়তা-সম্পর্ক নষ্টকারী জান্নাতে যাবে না। জুবাইর ইবনে মুতইম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

( لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ)

‘আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারি)।

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে আত্নীয়তার-সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন উত্তপ্ত ছাই ভক্ষণ করে। হাদীসে এসেছে :

(عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنْ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ)

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কিছু আত্মীয় রয়েছে আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করি আর তারা তা নষ্ট করে, আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি আর তারা আমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে তারা আমার সাথে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে আর আমি তাদের আচরণে ধৈর্য্য ধারন করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঘটনা যদি তেমনই হয় যেমন তুমি বলছ, তাহলে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ। আর যতক্ষণ তুমি তোমার এ অবস্থানে থাকবে, ততক্ষণ তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে’ (মুসলিম)।

তাছাড়া পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে আত্মীয়তা-সম্পর্ক নষ্টকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর লানত ও শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

{فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ. أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ}

‘ তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন’ (সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

{الَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ}

‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের মন্দ আবাস’ (রা‘দ : ২৫)

আর আত্মীয়তা-সম্পর্ক নষ্ট করার সবচে’ বড় নমুনা হলো পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা। তারপর যে সবচে’ কাছের তার সাথে, তারপর যে সবচে’ নিকটতর তার সাথে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلَاثًا قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ)

‘আমি কি তোমাদেরকে সবচে’ বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া’ (বুখারী)।

আত্মীয়তা-সম্পর্ক নষ্ট করার আরেকটি ক্ষতি হলো, আখিরাতের আগেই দুনিয়াতে এর শাস্তি প্রদান করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

(مَا مِنْ ذَنْبٍ أَحْرَى أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى الْعُقُوبَةَ لِصَاحِبِهِ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ الْبَغْيِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ)

‘ যেসব গুনাহের কারণে আল্লাহ তা‘আলা অপরাধিকে অতিসত্বর দুনিয়াতে শাস্তি প্রদান করেন তারমধ্যে বেশী উপযুক্ত হল যুলম ও আত্মীয়তা-সম্পর্ক নষ্ট করা। সাথে সাথে আখিরাতের শাস্তি তার জন্য সঞ্চিতই থাকবে’ (মুসনাদে আহমদ, সহীহ)।

অতএব হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহকে ভয় করুন এবং আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখুন। আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদেরকে উপহার দেয়া, তাদের পেছনে অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করুন। ভালোবাসা, আন্তরিকতা, নম্র কথা, হাসিমুখ, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন এবং সমাজে প্রচলিত সব ধরনের আত্মীয়তা রক্ষার উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করুন। এর দ্বারা দুনিয়াতে ও আখিরাতে কামিয়াব হোন। আমীন।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফীক দান করুন। সকল আত্মীয়ের হক আদায়ের তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি ইসলামের ইজ্জত ও কদর বাড়িয়ে দিন। মুসলমানদের ইজ্জত ও কদর বাড়িয়ে দিন। আপনি ইসলামকে সমগ্র পৃথিবীতে বিজয়ী আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করুন। আপনি ইসলামী আদর্শের অনুশীলন-অনুকরণ ব্যাপক করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকল বৈধ প্রয়োজনগুলো পূরণ করে দিন। আমাদেরকে দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করুন। আমাদের দেশকে দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করুন। আপনি যে পথে চললে রাযিখুশী হন সে পথে আমাদের দেশের কর্ণধারদের পরিচালিত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.